আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালীন রসালো ও মিষ্টি ফলগুলোর মধ্যে একটি হলো জাম। জাম পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুব কমই আছে। তাই আজকে জানবো জাম কেন খাবেন? এবং জামের উপকারিতা কি?
Table of Contents
জামের উপকারিতা ; ১২টি অজানা স্বাস্থ্য উপকারিতা
গ্রীষ্মের অন্যতম জনপ্রিয় ফল হলো জাম। জাম খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি স্বাস্থ্যের পক্ষেও বেশ উপকারী। অধিক পুষ্টিগুণে ভরপুর এই জামের উপকারিতা সম্পর্কে চলুন বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
১. পরিপাকে সাহায্য করে
জাম ফাইবার সমৃদ্ধ। ফলে এটি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে পরিপাকে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য জাম অনেক উপকারী। নিয়মিত জাম খাওয়ার ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
জামে ভিটামিন সি সহ ভিটামিন বি-কমপ্লেক্সের বিভিন্ন ভিটামিনগুলো বিদ্যমান। তাই জাম খাওয়ার ফলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট দেহের ফ্রি রেডিক্যাল দূর করতে সাহায্য করে।
৩. হাড়ের ক্ষয়রোধ করতে
জাম হাড়ের ক্ষয়রোধ করে। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, লৌহ এবং ভিটামিন সি সহ আরও অনেক খনিজ পদার্থ যা হাড়কে শক্তিশালী করে চমৎকার ভাবে। তাই হাড় মজবুত রাখতে খাদ্য তালিকায় জাম রাখা উচিৎ।
৪. ক্যান্সার প্রতিরোধে জাম
জাম ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভুমিকা পালন করে। দেহের বিভিন্ন ক্যান্সার যেমন জরায়ু, ডিম্বাণু এবং মলদ্বারের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে জামের উপকারিতা অনেক।
এতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট দেহে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ফ্রি রেডিক্যালগুলো দূর করে। এছাড়াও মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে জাম কার্যকর ভুমিকা পালন করে।
৫. ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে
জাম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি ফল। কারণ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং চিনির মাত্রা কমিয়ে দেয়। ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের শরীর সুস্থ থাকে।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত জাম খাওয়ার ফলে ৬৫ শতাংশ মানুষের ডায়াবেটিস কমে গেছে। ডায়াবেটিস হলে কি করণীয়, ডায়াবেটিস কমানোর উপায় জেনে নিন!
৬. জন্ডিস নিরাময়ে
আয়রনের প্রধান উৎস হলো জাম। আয়রন আমাদের দেহের বিভিন্ন উপকার সাধন করে। জামে বিদ্যমান আয়রন অ্যানিমিয়া ও জন্ডিস রোগ নিরাময় করে থাকে। এছাড়াও আয়রন ঘটিত বিভিন্ন সমস্যাই জাম বেশ উপকারী। জাম লিভারকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
৭. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে
জাম সঠিক ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। কারণ জামে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে বলে এটি স্বাস্থ্যসম্মত। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে জাম খেতে পারেন।
৮. হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে
জাম রক্তের ব্যাড কোলেস্টেরল কমিয়ে গুড কোলেস্টেরলের মাত্রা সঠিক রাখে ফলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ হয়। শরীরে দূষিত কার্বন-ডাইঅক্সাইড কমিয়ে অক্সিজেন পৌঁছে দিতে সাহায্য করে ফলে হার্ট সুস্থ থাকে এবং হার্ট–আ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়।
৯. ভিটামিনের অভাব জনিত রোগ সারে
জাম ভিটামিনের অভাব জনিত রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি যা দাঁত ও মাড়ির ক্ষয়রোধ করে দাঁতকে সুস্থ রাখে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।
এছাড়াও জামে থাকা পানি, পটাশিয়াম এবং লবন শরীরকে ঠান্ডা রাখে। এবং এতে রয়েছে প্রচুর আয়রন যা দেহে রক্ত তৈরী করতে সাহায্য করে।
১০. অরুচি ও বমি ভাব দূর করতে
জাম অরুচি আর বমি ভাব দূর করে রুচি বৃদ্ধি করে থাকে। পাকা জামের রসে সামান্য পরিমাণ লবণ মিশিয়ে দিনে এক চা চামচ করে খেলে বমি ভাব দূর হয়ে যায়।
সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com
১১. ত্বক ও চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষায়
জামে উপস্থিত থাকা ভিটামিন সি, ভিটামিন-এ এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থগুলো ত্বক ও চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। ভিটামিন-এ রাতকানা রোগ হতে বাধা সৃষ্টি করে এবং চোখের ছানি পড়ার ক্ষেত্রে জামের উপকারিতা অনস্বীকার্য।
১২. ত্বকের সমস্যা দূর করতে
ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে জাম কার্যকরী ভুমিকা রাখে। ত্বকের ব্রন, ছোপ ছোপ দাগ, ব্ল্যাকহেডস ইত্যাদি দূর করতে জামের উপকারিতা অনেক। এছাড়াও এটি কুঁচকে যাওয়া ত্বক টানটান করে।
জাম কেন খাবেন
আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালীন যে ফলগুলো পাওয়া যায় তার মধ্যে জাম অন্যতম। ফলটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এই ফলটি আমাদের শরীরে কাজ করে অতুলনীয় ভাবে।
এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-এ, সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, পানি, গ্লুকোজ, আয়রন, ফ্রুকটোজ, ডেক্সট্রোজ, স্যালিসাইলেট এসিড, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স সহ আরও অনেক খনিজ পদার্থ যা দেহকে নামা রোগ হতে মুক্তি দেয়।
জামে থাকা ভিটামিন সি ও পানি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখে। যারা হাড়ক্ষয় জনিত সমস্যাই ভুগছেন তাদের জন্য জামের উপকারিতা অনেক।
এছাড়াও জামে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানগুলি হাড়কে মজবুত করে শক্তিশালী করে তোলে। দাঁত ও মাড়ির ক্ষয়রোধ করে দাঁতকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
এর এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থগুলো ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে নানা রোগ সারতে সাহায্য করে। পুষ্টিগুণে অতুলনীয় এ ফলটি আমাদের শরীরকে সুস্থ ও চাঙ্গা রাখতে অত্যন্ত কার্যকরী।
ভিডিওঃ কালো জামের যত উপকারিতা । Benefits of Blackberries
শেষ কথা
জাম আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় ফল। দামে যেমন সস্তা তেমনি সহজলভ্য এই ফলটি ছোট বড় সকলেই পছন্দ করে। নানা রোগ হতে মুক্তি পেতে এবং সুস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে জামের উপকারিতা অতুলনীয়। তাই সময় পেলেই জাম খেতে পারেন।
জাম আসলেই খুবই উপকারী একটা ফল।