আলকুশি বীজ

আলকুশি বীজ এর ১৫টি উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন!

আলকুশি গাছের ফলের বীজ ও মূল প্রাকৃতিক ঔষুধি গুণাগুনে ভরপুর।’আলকুশি’ শিম পরিবারের একপ্রকার উদ্ভিদ জাতীয় গুল্ম গাছ। এর ফল অনেকটা শিমের মতো।

বীজগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লোম দ্বারা আবৃত থাকে যা ত্বকের সংস্পর্শে এলে প্রচণ্ড চুলকানি সৃষ্টি করে। সবাই যার যার সাধ্য অনুযায়ী এই বীজ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। 

আমাদের দেশে অনেকে বিলাই-চিমটি নামেও চিনে থাকে আলকুশি বীজকে। আলকুশি বীজের আদ্যেপান্ত জানতে পারবেন নিচের অংশ থেকে।

ভিডিওঃ প্রোটিন জাতীয় খাবার কি কি? ৩৫টি প্রোটিন যুক্ত খাবারের তালিকা জেনে নিন।

জেনে নিন আলকুশি বীজ কী? 

আলকুশি ঔষধি গাছ হিসেবে বহুকাল আগে থেকেই পৃথিবীতে সুপরিচিত। বিড়াল-চিমটি বা আলকুশি গাছের শিমের মতো ফলের ভিতরের অংশই হলো আলকুশি বীজ।  কিছু আলকুশি আছে যার লোম নেই বললেই চলে সেটা কাকাণ্ডোল হিসেবে পরিচিত।

আলকুশি বা বিলাই খামচি এর বৈজ্ঞানিক নাম: Mucuna pruriens এবং ইংরেজিতে  Velvet bean, Cowitch, Nescafe, Sea bean.ইহা Fabaceae পরিবারের একটি উদ্ভিদ।

ওষধি হিসেবে আলকুশি বীজের উপকারিতা

প্রাচীনকাল থেকেই এই উদ্ভিদের বীজ ও মূল আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে চিকিৎসার জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে।এই বীজ শারীরিক শক্তি বৃদ্ধিসহ আরও অনেক উপকারে আসে। 

বর্তমান যুগে কৃত্তিম ঔষধের বাহারিপনায় প্রাকৃতিক গুণাগুণ সম্পন্ন এসব ভেষজ উদ্ভিদের ব্যবহার অনেকটাই কমে গেছে। যার মূল কারণ আলকুশি নিয়ে সকলের জানার পরিধির অভাব।তাই আমরা আলকুশি বীজ ও মূলের প্রাকৃতিক গুণাগুণ ও এর উপকারিতা নিয়ে জানব।

১. যন্ত্রণা উপশম

 যেকোন পোকা মাকড়ের কামড় বা বিছার দংশনে আলকুশীর বীজের গুড়া লাগালে অনেকাংশে যন্ত্রণা কমে যায়।

২. আমাশয়ের পাথেয়

আলকুশি এর শিকড়ের রস নিয়মিত এক চামচ করে একমাস খেলে আমাশয় রোগ সারে।

৩. ফোঁড়া থেকে মুক্তি

আলকুশি গাছের পাতার রস ফোঁড়ায় দিলে অচিরেই সেটি ফেটে যায় ও ব্যাথা তুলনামূলক কম হয়।

৪. বাতের ব্যথা নিরাময়

চিনি ও দুধসহ আলকুশি বীজ সেদ্ধ করে খেলে বাত রোগের উপশম হয়। 

৫. জ্বর-সর্দির ঔষধ

আলকুশি গাছের শিকড়ের রসে জ্বর, সর্দি-কাশি ভালো করে।

৬. কিডনীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি

বহু গুন সম্পম্ন এই গাছের শিকড়ের মণ্ডু মূত্রবর্ধক ও মূত্রযন্ত্রের রোগ নিরাময়ে বেশ উপকারে আসে।

. চক্ষু চিকিৎসা

ভেষজ এই গাছের কাণ্ডের রস চোখের রোগ সারানোর ক্ষেত্রেও ফলপ্রসূ।

৮. প্রাকৃতিক এন্টিসেফটিক 

আলকুশির শিকড়ের রস জীবজন্তুর দেহের ঘায়ে লাগালে ক্ষত দ্রুত সরে যায়।

৯. যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আলকুশি বীজ

নিয়মিত এই গাছের বীজ ও মূল ব্যবহার করলে শারীরিক দুর্বলতা দূর হয়, শুক্রানু বৃদ্ধি পায় ও গাঢ় হয়। আলকুশি বীজ মূলত মূলত পুরুষের যৌনাঙ্গের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে অধিক কার্যকরী।

১০. শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে

দীর্ঘদিনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত আলকুশি বীজের গুঁড়া এক গ্লাস দুধের সাথে পরিমাণ মতো মিশিয়ে খেলে শারীরিক শক্তি বাড়ে ও ক্লান্তি দূর হয়। 

দিনের শুরুতে বা দিনের শেষে এক গ্লাস আলকুশি বীজের শরবত আপনার শরীরে সারাদিনে হারানো শক্তির যোগান দিতে পারে।

১১. রক্তপাত বন্ধ করে

অনুচক্রিকার অভাবে ঋতুস্রাবের সময় বা যেকোনো ব্যাথা পেলে অনেকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ হয়ে থাকে। এসব ক্ষেত্রে আলকুশি গাছের শিকড়ের রস ক্ষতস্থানে লাগালে রক্তপাত দ্রুত বন্ধ হয়। 

মাসিক বা ঋতুস্রাবের সময় আলকুশি বীজ চূর্ণ গরম পানি বা দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে রক্ত ক্ষরণ কমে। উভয় ক্ষেত্রেই শরীরের হারানো শক্তি পুনরুদ্ধার হয় এই বীজ সেবনে।

১২. বিভিন্ন রোগ নিরাময় করে

এই বীজের গুড়া মধুসহ খেলে কলেরা বা মারাত্মক পেট ফাঁপা জনিত রোগ থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। হঠাৎ হাত-পা, বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ঝিনঝিন করা ও অবস হয়ে যাওয়া সমস্যার সমাধান আছে নিয়মিত আলকুশি বীজ চূর্ণ খেলে।

১৩. হস্তমৈথুনের প্রভাব কাটিয়ে উঠুন

নিজের করা এই ভুলের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে দৈনিক ৫-৬ টি বীজ অল্প থেঁতলে দুধে সেদ্ধ করে টানা ১০-১২ দিন খেলে সুফল পাওয়া যাবে।

১৪. রক্তপিত্ত থেকে আরোগ্য

 আলকুশি গাছের পাতা শাকের ন্যায় রান্না করে খেলে রক্তপিত্ত থেকে আরোগ্য হতে পারে।

১৫. কফ উপশমকারী

দীর্ঘদিন বুকে জমে থাকা কফ সারাতে এর মূল বেশ উপকারী। 

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

ভাবছেন আলকুশি বীজ কোথায় পাবো?

বাজারের ভেষজ  দোকানেই মূলত এই বীজ পাওয়া যায়। তবে সেইসব আলকুশি বীজ গুঁড়া করতে আপানকে সমস্যা পোহাতে হতে পারে। নিম্ন মানের সংরক্ষণের কারণে বাজারের বীজ অনেকাংশেই তার গুণাগুণ হারিয়ে ফেলে।তাই দেখেশুনে অনলাইন বা অফলাইন থেকে সংগ্রহ করতে পারেন। 

এছাড়াও বাড়ির আশেপাশের ঝোপ ঝাড়ে এক জায়গাতেই এই গুল্ম বারবার জন্মে , প্রায় সবরকম জঙ্গলেও পাওয়া যায়। একসময় আমাদের বাড়ি-ঘরের আশেপাশে দেখা মিলতো এসব গাছের। নগরায়নের ফলে এগুলো এখন ধীরে ধীরে চোখের আড়ালে চলে যাচ্ছে। 

আলকুশি বীজ চেনার সহজ উপায় 

প্রতি ফলে ৪ থেকে ৬ টা বীজ থাকে ,বীজগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লোম দ্বারা আবৃত থাকে যা সহজেই পৃথক হয়ে যায়। এগুলি ত্বকের সংস্পর্শে এলে প্রচণ্ড চুলকানি সৃষ্টি করে। তাই নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখেই এই বীজ চিনতে হবে।

আলকুশী অনেকটা সিমগাছের মতো এবং ছোট ছোট মোমদ্বারা আবৃত। এর পাতা আট থেকে ১২ সে. মি. পর্যন্ত লম্বা হয় এবং পাতাগুলো বেশ মসৃণ। আলকুশীর বীজ চেপ্টা, ঈষৎ পীতবর্ণ, মুখাংশ কৃষ্ণবর্ণ। এই গাছের কাটা গায়ে লাগলে সেই স্থান ফুলে উঠে। প্রায় প্রতি বছরই এর ফুল ও ফল হয়।

আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার নিয়ম

শুকনো ১০০টি বীজের ওজন ৫৫-৮৫ গ্রাম হয়ে থাকে।আলকুশি বীজ চূর্ণ ও অশ্বগন্ধা মূল চূর্ণ দুটো সমপরিমাণে ৩০০ মিলিগ্রাম টোটাল এক চা চামচ মধুসহ ১ গ্লাস পানিতে সারারাত ভিজিয়ে সকালে সেই পানি পান করতে হবে।

এর ফলে যেকোনো বয়সী ব্যাক্তির শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।নিয়মিত ৫-৬ টি বীজ গুড়ো করে দুধের সাথে ঝাল দিয়ে পান করলে বীর্যস্থলন ও ধাতুদৌর্বল্য থেকে মুক্তি লাভ হবে।

মানবদেহে আলকুশি বীজের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

আলকুশি বীজ খাওয়ার তেমন কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। ভেষজ উপাদান হওয়াতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান এতে প্রায় নেই বললেই চলে।তবে যেকোন ক্ষত স্থানে আলকুশি গাছের শিকড়ের রস লাগানোর পূর্বে জায়গাটি ভালভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। 

পাশাপাশি সবসময় খেয়াল রাখতে হবে যে শিকড়ের রসের সাথে অন্য কোন পদার্থ মিশে আছে কিনা, যদি থাকে তাহলে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সেই রস থেকে ইনফেকশনের সম্ভাবনা তৈরি হয়।

শেষ কথা

আলকুশী ফলের বীজ ও পাতায় আছে- সেরাটোনিন, যার কারণে চুলকানির উদ্রেক হয়। তাই সঠিক ব্যবস্থা নিয়ে এগুলো ধরা উচিত। আলকুশি একটি ওষধি গাছ বা গুল্ম তাই এর রয়েছে অনেক গুণ ও উপকারী ক্ষমতা । এই গাছের বিভিন্ন ব্যবহার করে নানাবিধ অসুখ থেকে আরোগ্য লাভ করার সুয়োগ রয়েছে।

মজার ব্যাপার হলো মধ্য আমেরিকায় আলকুশির বীচি আগুনে ভেজে চূর্ণ করা হয় কফির বিকল্প হিসেবে। তাই ব্রাজিল, আর্জেন্টিনাসহ অন্যান্য দেশে এর প্রচলিত নাম হচ্ছে নেস ক্যাফে। এখনও গুয়েতেমালায় কেচি সম্প্রদায়ের মানুষ খাদ্যশস্য হিসেবে এটি আবাদ করে। এমনকি সবজি হিসেবে রান্না হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top