থ্যালাসেমিয়া

থ্যালাসেমিয়া কি এবং কেন হয়; এর লক্ষণ ও প্রতিরোধ বিস্তারিত জানুন!

থ্যালাসেমিয়া কি এই নিয়ে অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন জাগে৷ আসলে থ্যালাসেমিয়া (Thalassemia) হলো রক্তের একটি রোগ যা সাধারণত বংশগতভাবে ছড়ায়। শিশুদের ক্ষেত্রে ভালোভাবে এই রোগের চিকিৎসা না করালে এটি মৃত্যুর কারণও হয়ে দাঁড়াতে পারে। 

তাই চলুন থ্যালাসেমিয়া সর্ম্পকে বিস্তারিত জানি যেন এর থেকে দূরে থাকতে পারি। ভিডিওঃ থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে করণীয়?

থ্যালাসেমিয়া কি

থ্যালাসেমিয়া একধরনের বংশগত রক্তরোগ। এটি জিনবাহিত রোগ, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রবাহিত হয়। 

বর্তমানে আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ ভাগ এই থ্যালাসেমিয়ার জিন বহন করে। আমাদের দেশে বর্তমান সময়ে ২০ কোটি মানুষের  মধ্যে বিবেচনা করলে দুই কোটি মানুষই এই রোগের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

থ্যালাসেমিয়া কি এই নিয়ে বিস্তারিত জানার আগে হিমোগ্লোবিন কী তা আমাদের জানতে হবে। 

আমাদের রক্তে যে কোষগুলো থাকে তার মধ্যে একটি হল লোহিত রক্ত কণিকা। এই লোহিত কণিকাতে  একটি প্রোটিন থাকে যার নাম হিমোগ্লোবিন। হিমোগ্লোবিন রক্তের লাল রঙের রঞ্জক পদার্থ। হিমোগ্লোবিন এর দুইটি প্রধান অংশ আছে যা হল – আয়রন (৪%) এবং গ্লোবিন (৯৬%)। 

থ্যালাসেমিয়া রোগের চিকিৎসা

থ্যালাসেমিয়া হলে কী হয়

এই রোগে রক্তে অক্সিজেন পরিবহনকারী হিমোগ্লোবিন কণার উৎপাদনে ত্রুটি হয়। থ্যালাসেমিয়া ধারণকারী মানুষ সাধারণত রক্তে অক্সিজেনস্বল্পতা বা “অ্যানিমিয়া”তে ভুগে থাকেন।

থ্যালাসেমিয়া রোগের কারণ

ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিন জিনের কারণে থ্যালাসেমিয়া হয়ে থাকে। বাবা অথবা মা, অথবা বাবা- মা উভয়েরই থ্যালাসেমিয়া জীন থাকলে বংশানুক্রমে এটি সন্তানের মধ্যে ছড়ায়। 

বাবা এবং মা উভয় যদি থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে ভূমিষ্ঠ শিশুর দেহে শতকরা ২৫ ভাগ এই রোগ বহন করে।

থ্যালাসেমিয়া কয় ধরনের?

থ্যালাসেমিয়া দুইটি প্রধান ধরনের হয়ে থাকে: 

১) আলফা থ্যালাসেমিয়া 

২) বিটা থ্যালাসেমিয়া।

আলফা থ্যালাসেমিয়া কি?

বাবা-মা থেকে প্রাপ্ত চারটি জিনের মধ্যে এক বা তার অধিক ত্রুটিপূর্ণ হলে আলফা থ্যালাসেমিয়া হয়। যত বেশি জিন ত্রুটিপূর্ণ হবে তত বেশি দেহে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিবে।

বিটা থ্যালাসেমিয়া কি?

দুটি জিন ত্রুটিপূর্ণ হলে মাঝারি থেকে মারাত্মক উপসর্গ দেখা যায়। এ অবস্থাকে বলা হয় বিটা থ্যালাসেমিয়া। নবজাতক যেসব শিশুর এই সমস্যা থাকে তারা জন্মের সময় বেশ স্বাস্থ্যবান থাকে। তবে জন্মের প্রথম দুই বছরের মধ্যেই এর উপসর্গ গুলো আসতে আসতে দেখা মিলে।

থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ

নিম্নোক্ত লক্ষণসমূহ কোনো শিশুর মধ্যে দেখা দিলে বুঝে নিবেন তার থ্যালাসেমিয়া হয়েছে। 

(১) শিশুকাল থেকে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয় এবং ক্রমশ তা বৃদ্ধি পেতে থাকে ।

(২) অনেক সময় রক্তের লোহিতকণিকা অতি দ্রুত ভেঙ্গে গেলে হিমোলাইটিক জন্ডিস দেখা দিতে পারে।

(৩) শরীরে সর্বদা দুর্বলতা ও অবসাদ থাকে।

(৪) শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘাটতি দেখা দেয়।

(৫) ধীরে ধীরে লিভার ও প্লীহা বৃদ্ধি পায়। 

(৬) গালের হাড় খুব উঁচু হয়ে যায় এবং শিশুকে অস্বাভাবিক দেখায়।

(৭) মাথার হাড় এবং অন্যান্য লম্বা হাড়ের একটা পরিবর্তন দেখা দেয়।

(৮) লোহিত কণিকা অতি দ্রুত ভেঙ্গে যাওয়ার দরুন পিত্তপাথর তৈরি হয়ে থাকে।

(৯) নাক থেকে রক্ত পড়ে।

(১০) শরীরের চামড়ায় কালচে ভাব দেখা দেয় এবং পায়ে ঘা এর সৃষ্টি হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় থ্যালাসেমিয়া

থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত মায়েদের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তাই গর্ভধারণের আগে এবং গর্ভধারণের পুরো সময় জুড়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে। মায়েরা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হলে গর্ভের বাচ্চার নিউরাল টিউব ডিফেক্টের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

থ্যালাসেমিয়া কি ভালো হয়

মূলত থ্যালাসেমিয়া রোগের পূর্ণাঙ্গ বা স্থায়ী কোন চিকিৎসা নেই। প্রকৃত অর্থে এটি নিরাময়যোগ্য কোন রোগ নয়। তবে আমরা চাইলে সঠিক নিয়ম মেনে এই রোগপ্রতিরোধ করতে পারি।

থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ

মানুষ একটু সচেতন হলেই থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ সম্ভব।

যদি স্বামী-স্ত্রী দু’জন থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন। সে ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থাতেই প্রায় ২৫ শতাংশ শিশু এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। ৫০ শতাংশ শিশুর আবার এই রোগের বাহক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বাকি ২৫ শতাংশ শিশু সম্পূর্ণ সুস্থ ভাবে জন্ম নিতে পারে বলে মতামত চিকিৎসকদের।

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজন যদি সুস্থ থাকেন, সে ক্ষেত্রে নবজাতকের থ্যালাসেমিয়া হওয়ার কোনও সম্ভাবনা থাকে না। তবে থ্যালাসেমিয়ার বাহক হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

এই সব কারণে এই রোগের বাহকদের একে অপরকে বিয়ে না করাই ভালো। সেই জন্য বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত বলে চিকিৎসকরা মনে করেন।

ভিডিওঃ থ্যালাসেমিয়া কি এবং কেন হয়; এর লক্ষণ ও প্রতিরোধ বিস্তারিত জানুন।

শেষকথা

থ্যালাসেমিয়া কি এবং কেন হয় আশাকরি উপরোক্ত তথ্যের ভিত্তিতে তা আপনারা জানতে পেরেছেন। এই রোগ নিরাময় কষ্টসাধ্য হলেও সচেতনতার মাধ্যমে এর প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব। স্বাস্থ্য বিষয়ক আরও পরামর্শ জানুন!

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top