ফলিক এসিড

ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার এর ২৫টি উপকারিতা সহ বিস্তারিত তথ্য!         

ফলিক এসিড বা ফলেটের নাম অনেকেই শুনছেন, কিন্তু ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার কোন গুলো সে সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই বললেই চলে। আসলে ফলিক এসিড বা ফলেট ভিটামিন বি৯ হিসেবে পরিচিত। 

ফলিক এসিড মূলত এক ধরনের ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, যাকে ভিটামিন বি ৯ বলা হয়। এটি জলে দ্রবণীয়। ফলিক এসিড কে ফলেট নামেও অভিহিত করা হয়। 

মানব দেহের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য ফলিক এসিড অর্থাৎ ভিটামিন বি ৯ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ফলিক এসিড বা ফলেট প্রাকৃতিক ভাবে বিভিন্ন খাবারের মধ্যে পাওয়া যায়। আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। 

ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার সম্পর্কে জেনে নিন 

ফলিক এসিড বা ফলেট মানব দেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি ভিটামিন। বিশেষজ্ঞদের মতে, নারীদের কিংবা গর্ভধারণের আগে থেকেই ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিৎ। 

প্রাকৃতিক খাদ্যদ্রব্য গ্রহণের মাধ্যমে ফলিক এসিডের চাহিদা পূরণ করা যায়। প্রাকৃতিক ভাবে যে সমস্ত খাদ্যদ্রব্য থেকে আমরা ফলিক এসিড পেয়ে থাকি তা হলোঃ-

  • বিভিন্ন সবুজ পাতা সমৃদ্ধ শাক যেমন পালং শাক, মুলাশাক, কচু শাক, পাটশাক, মেথি শাক, লাল শাক, ওলকপি পাতা, পাট শাক, সজনে পাতা, পুঁইশাক, সরিষা শাক, নটে শাক, সবুজ ডাঁটা শাক, লাউ শাক ইত্যাদিত ফলিক এসিড সমৃদ্ধ। 
  • বিভিন্ন সবজি যেমন ব্র’কলি, বাঁধাকপি, শিম, শালগম, মটরশুঁটি, ফুলকপি, বরবটি, বীট, ঢেরস, টমেটোর রস, আলু, পেঁপে, শতমূলী এবং গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফলিক এসিড। 
  • বিভিন্ন ধরনের ফল যেমন আম, জাম, পাকা পেঁপে, কলা, ভুট্রা, ডালিম, আঙ্গুর, পেয়ারা, তরমুজ, লিচু, অ্যাভোকাডো, কমলা, বাতাবি লেবু, মাল্টা, আনারস, পাতি লেবু স্ট্রবেরি, ফুটি এবং টক জাতীয় ফলে প্রচুর পরিমাণ ফলিক এসিড থাকে। 
  • বিভিন্ন ধরনের ডাল যেমন মাসকলাই, মুগডাল, মসুর ডাল ও বুটের ডালে প্রচুর পরিমাণ ফলিক এসিড রয়েছে। 
  • আমিষ জাতীয় খাদ্যের মধ্যে কলিজা বা লিভার, দুধ, ডিমের সাদা অংশ ও ডিমের কুসুম এবং মুরগির মাংসে  ফলিক এসিড রয়েছে। 

এছাড়াও সূর্যমুখীর বীজ, লাল চাল, সাদা ভাতের চাল, সরিষা, লাল আটা, সুজি, তিল, তিসি, ওটস, মাসরুম, বিভিন্ন প্রকার বাদাম যেমন কাঠবাদাম, চিনা বাদাম ও কাজুবাদাম এবং আখরোট ও কাঁকড়াতে প্রচুর পরিমাণ ফলিক এসিড বিদ্যমান থাকে। 

প্রাকৃতিক খাদ্যদ্রব্য ছাড়াও ফলিক এসিড সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমেও গ্রহণ করা যেতে পারে। 

খাদ্য তালিকায় ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার এর প্রয়োজনীয়তা

ফলিক এসিড এমন একটি ভিটামিন যা শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত উভয়ের জন্যই প্রয়োজন। চিকিৎসকদের মতে, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক অন্তত ২০০   মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড গ্রহণ করতে হবে। 

যেহেতু আমাদের শরীর ফলিক এসিড উৎপাদন করতে পারে না তাই বিভিন্ন পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য থেকে ফলিক এসিড গ্রহণ করতে হয়। আমাদের শরীরের জন্য ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়ের জন্য ফলিক এসিডের গুরুত্ব অপরিসীম। 

প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ফলিক এসিডের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কারণ ফলিক এসিড ডিএনএ গঠন বা মেরামত করতে এবং ক্রমাগত কোষ বিভাজনে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে থাকে। ফলিক এসিড লোহিত রক্ত কনিকা তৈরি করতে এবং রক্ত সল্পতা পূরণে শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্ত বয়স্ক পর্যন্ত উভয়ের জন্যই এই ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। মোট কথা আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কার্যকলাপ বজায় রাখার জন্য ফলিক এসিড জরুরি। 

ফলিক এসিড এর অভাবে কি হয়

মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গ সঠিক ভাবে কাজ করার জন্য ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের ভুমিকা অপরিসীম। শরীরে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের ঘাটতি হলে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন গুলোর মধ্যে একটি হলো ফলিক এসিড বা ভিটামিন বি-৯ অথবা ফলেট।

ফলিক এসিডের অভাবে মানব দেহে যে সমস্যা গুলো সৃষ্টি হয় তা হলো-

১. মুখ ও জিহবায় ঘা

অনেক সময় আমাদের মুখ ও জিহবায় ঘা হয়, তা ফলিক এসিডের অভাবেই হয়ে থাকে।

২. চুল ধুসর বর্ণ হওয়া 

ফলিক এসিড বা ফলেটের অভাবের কারণে অনেক সময় চুলের রং ধুসর বর্নের হয়ে যায়। তাই চুলের রং বদলে যেতে শুরু করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। 

৩. শরীরে ক্লান্তি ভাব আসা 

শরীরে ফলিক এসিডের অভাব হলে ক্লান্তি ভাব আসে। যদি দীর্ঘদিন ধরে এই ক্লান্ত বোধ হয় তবে বুঝতে হবে শরীরে ফলিক এসিডের অভাব হয়েছে এবং খুব শীঘ্রই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। 

৪. চামড়ার রং পরিবর্তন 

ফলিক এসিডের অভাবে অনেক সময় চামড়ার রং পরিবর্তন হয়ে ফ্যাকাসে হয়ে যায়। 

৫. জিহবা ফুলে যাওয়া 

শরীরে ফলিক এসিড বা ফলেটের অভাব দেখা দিলে জিহবা ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা হয়।

৬. অ্যানিমিয়া রোগ

ফলিক এসিডের অভাবে অ্যানিমিয়া রোগ হয়ে থাকে। ফলে রক্ত সল্পতার বিভিন্ন লক্ষন দেখা দেয়। 

৭. শরীর বৃদ্ধিতে বাধা

ফলিক এসিডের অভাবে শরীর বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি হয় ফলে শরীর ধীরে ধীরে বৃদ্ধি হয়। 

৮. অলসতা ও দুর্বলতা

অনেক সময় শরীরে ফলিক এসিড বা ফলেটের অভাব হলে মনে অলসতা এবং শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। 

৯. হৃদরোগ

ফলিক এসিডের অভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। 

১০. নিঃশ্বাসে দুর্বলতা

ফলিক এসিডের অভাব হলে রক্তে নমনীয়তা কমে রক্ত প্রবাহে বিঘ্ন ঘটায়। যার ফলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রতঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। 

এছাড়াও গর্ভবতী নারীদের শরীরে ফলিক এসিডের ঘাটতি হলে শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র গঠনে ত্রুটি দেখা দেয়। 

গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার কেন গ্রহণ করবেন ?  

গর্ভাবস্থায় নিয়মিত নানা ধরনের পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। শুধু খাবার দিয়ে পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের মধ্যে ফলিক এসিড এমন একটি ভিটামিন যা মা ও শিশু উভয়ের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষকদের মতে, শুধু গর্ভবতী নারীদের নয়, গর্ভধারণের আগে থেকেই ফলিক এসিড গ্রহণ করতে হবে। 

ফলিক এসিড ডিএনএ গঠন, কোষ বিভাজন এবং কোষের বৃদ্ধিতে বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ, তাই গর্ভবতী মা ও নবজাতকের জন্য ফলিক এসিড জরুরি। লোহিত রক্ত কনিকা তৈরি করতে এবং রক্ত সল্পতা পূরনে গর্ভবতী মা ও শিশু উভয়ের জন্যই ফলিক এসিড প্রয়োজন। 

কারণ গর্ভবতী মায়ের শরীরে যদি ফলিক এসিডের ঘাটতি থাকে তবে নবজাতক শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র গঠনে ত্রুটির সম্ভাবনা রয়েছে। গর্ভবতী মায়ের জন্য ফলিক এসিড অত্যন্ত উপকারী। কারণ ফলিক এসিড গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মা এবং গর্ভজাত শিশুকে অনেক জটিলতা থেকে রক্ষা করে।  

গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভকালীন সময়ে যে সব গর্ভবতী মায়েরা অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলিক এসিড গ্রহণ করেছেন, তাদের গর্ভজাত শিশুর স্নায়ুতন্ত্র এবং মস্তিষ্কের সমস্যা শতকরা ৬০ থেকে ১০০ ভাগ কমে গেছে। 

তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, ফলিক এসিড শুধু গর্ভবতী নারীদেরই নয়, গর্ভধারণের আগে থেকেই খাদ্য তালিকায় ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার সংযোজন করা উচিৎ। 

ফলিক এসিড এর উপকারিতা

ফলিক এসিড বা ভিটামিন বি৯ মানব শরীর বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

যেমন- 

  • ফলিক এসিড শরীরে নতুন কোষ এবং নিউক্লিক এসিড তৈরি করতে সহায়তা করে।  
  • ফলিক এসিড ডিএনএ গঠন ও কোষ বিভাজনে সাহায্য করে। 
  • এটি কোষের বৃদ্ধিতেও বিশেষ ভাবে উপকারী। 
  • ফলিক এসিড লোহিত রক্ত কনিকা তৈরি করতে এবং রক্ত সল্পতা প্রতিরোধে সহায়তা করে। 
  • এটি গর্ভের শিশুর ‘নিউরাল টিউব’ গঠনে সাহায্য করে। 
  • ফলিক এসিড গর্ভজাত শিশুর বিভিন্ন ত্রুটির ঝুঁকি কমায়। 
  • এটি অ্যানিমিয়া রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী। 
  • ফলিক এসিড শরীরের ক্লান্ত ভাব, অবসাদ এবং অলসতা দূর করে শরীর কে চাঙ্গা এবং কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে। 
  • এটি গর্ভাবস্থায় মা ও গর্ভজাত শিশুর জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করে। 
  • ফলিক এসিড গর্ভপাতের ঝুঁকি কমায়। 
  • ফলিক এসিড নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ ভুমিকা পালন করে। 
  • এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। 
  • ফলিক এসিড স্ট্রোক এবং ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী। 
  • এটি গর্ভকালীন সময়ে গর্ভস্রাব ও অ্যালঝেইমা রোগ প্রতিরোধ করে। 
  • এটি শারীরিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে। 

উপসংহার 

পরিশেষে বলা যায়, মানব দেহ সুস্থ ও রোগ মুক্ত রাখতে যে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের প্রয়োজন তার মধ্যে ফলিক এসিড বা ফলেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভিটামিন বি৯ এর দ্রবণীয় রুপ।

বিভিন্ন পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে ফলিক এসিড আমাদের শরীরে তৈরি হয়ে থাকে। তাই উল্লেখিত ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার গুলি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আমাদের সকলেরই রাখা উচিৎ।        

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top