পেয়ারার উপকারিতা – পেয়ারা একটি পরিচিত ফল। সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফলের উপকারিতা অনেক। দেশী ফলগুলোর মধ্যে পেয়ারা বেশ জনপ্রিয়। সারা বছরই এটি পাওয়া যায়। শুধু পেয়ারা নয়, পেয়ারার পাতার উপকারিতাও আছে বেশ।
চলুন আজ আমরা পেয়ারার উপকারিতা ও এর কিছু অসাধারণ পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানবো।
Table of Contents
পেয়ারার উপকারিতা
পেয়ারা অতি সাধারণ একটি ফল হলেও এর উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। বলা হয়, একটি পেয়ারায় চারটা আপেলের সমান পুষ্টিউপাদান থাকে।
নিম্নে পেয়ারার উপকারিতা ক্রমান্বয়ে আলোচনা করা হলো।
পেটের সমস্যা দূর করে
পেয়ারা ফাইবার জাতীয় ফল। এটি খেলে রুচি বাড়ে, হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। কেউ যদি কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন তবে পেয়ারা খেলে ভালো ফল পাবেন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
পেয়ারাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। ফলে এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। ভিটামিন সি ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরে যেকোনো রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। এতে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহের ক্ষতস্থান শুকাতে বেশ কার্যকরি।
ক্যান্সার প্রতিরোধে
পেয়ারা ক্যান্সার প্রতিরোধেও সক্ষম। এতে বিদ্যমান এন্টি-অক্সিডেন্ট ও লাইকোপিন দেহে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে। বিশেষ করে মেয়েদের প্রস্টেট এবং স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পেয়ারা অত্যন্ত উপকারি।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পেয়ারার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। পেয়ারার রসে ও পেয়ারার পাতায় থাকা ডায়াবেটিস প্রতিরোধী উপাদান মেলাইটাসের চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকরী।
ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর করতে
পেয়ারায় রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণ আয়রন ও ভিটামিন সি। ফলে ঠান্ডা জনিত বিভিন্ন সমস্যা যেমন সর্দি-কাশি, এ্যাজমা, শ্লেষ্মা, ঠান্ডা লাগা এবং ব্রংকাইটিস প্রতিরোধে পেয়ারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে
পেয়ারাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-এ যা চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করতে, কর্নিয়াকে সুস্থ রাখতে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। তাই খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন একটি করে পেয়ারা রাখা দরকার।
হার্ট এট্যাকের ঝুঁকি কমায়
পেয়ারা রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে হার্ট এট্যাকের ঝুঁকি থাকে না। পেয়ারা খাওয়ার ফলে রক্তে চর্বির পরিমাণ কম থাকে এবং হার্টের বিভিন্ন অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
পেয়ারা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর। এতে রয়েছে পটাসিয়াম যা রক্তচাপ বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে হৃদরোগের সম্ভাবনা কমে যায়।
ওজন বৃদ্ধি রোধ করে
পেয়ারাতে গ্লুকোজের পরিমাণ কম থাকায় ওজন বৃদ্ধির কোন সম্ভাবনা থাকে না। বরং ওজন ঠিক রাখতে পেয়ারা একটি ভালো উপকরণ।
গর্ভবতী মায়ের ক্ষেত্রে
গর্ভবতী মায়ের জন্য পেয়ারা অত্যন্ত উপকারী। কারণ পেয়ারায় বিদ্যমান ফলিক এসিড গর্ভে থাকা শিশুর স্নায়ুতন্ত্র গঠনে বিশেষ ভুমিকা পালন করে এবং স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে।
ডায়রিয়া প্রতিরোধে
পেয়ারায় রয়েছে ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা। তাই নিয়মিত পেয়ারা খেলে ডায়রিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
শিশুর বুদ্ধি বিকাশ করে
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের বুদ্ধি বিকাশে পেয়ারা বেশ কার্যকরী। কারণ পেয়ারায় রয়েছে ভিটামিন বি৩ এবং নিয়াসিন যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালনের ভারসাম্য বজায় রাখে।
ত্বক ও চুলের যত্নে
ত্বক ও চুলের যত্নে পেয়ারা একটি উপকারী ফল। এতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে যা চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। ত্বকের রুক্ষতা দূর করে ত্বককে সুন্দর করে ও তারুণ্য ধরে রাখতেও পেয়ারা ভূমিকা অনস্বীকার্য।
পেয়ারার অসংখ্য পুষ্টিগুণের কল্যাণে এর উপকারিতা অনেক। জেনে নিন পেয়ারার কিছু অসাধারণ পুষ্টিগুন সম্পর্কে।
ভিডিওঃ লিচু বেশি খাওয়ার উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জানুন।
পেয়ারার পুষ্টিগুণ
পেয়ারা নানা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল। আমলকি ছাড়া অন্যান্য সবুজ ফলের চেয়ে পেয়ারাতে ভিটামিন সি রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। এতে আছে ভিটামিন এ ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি পেয়ারায় রয়েছে চারটি আপেল ও চারটি কমলালেবুর সমান পুষ্টিগুন।
এছাড়াও পেয়ারাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, বিটাক্যারোটিন, ফসফরাস, ফলিক এসিড, নিকোট্রিন এসিড, ভিটামিন-এ বি কে, প্রোটিন ও খনিজ পদার্থ। এবং এতে গ্লুকোজের পরিমাণ কম থাকায় ওজন বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে।
শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ পেয়ারা পাতার জুস গ্যাসস্ট্রাইটিসের সমস্যায় বেশ উপকারী। জটিল শর্করা ও তন্ত্তসমৃদ্ধ পেয়ারা রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। বয়সের সাথে জড়িত বিভিন্ন রোগ যেমন স্মৃতিভ্রংশ,চোখের ছানি,আর্থরাইটিস বা হাটু ব্যথা প্রতিরোধে সহায়তা করে।
পেয়ারায় প্রচুর পরিমাণ পানি থাকায় পেটের নানা সমস্যা দূর করে। পেয়ারার রস কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং সর্দি-কাশি, এ্যাজমা, স্কার্ভি, স্থুলতা ইত্যাদি অসুখের ক্ষেত্রে বেশ উপকারী।
পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ পেয়ারার উপকারিতা অন্যান্য ফলের তুলনায় তাই অনেক বেশি। এ ফলে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন ও নানা ধরনের খনিজ পদার্থগুলো আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলে আমাদেরকে বিভিন্ন রোগ হতে মুক্তি দেয়।
সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন আমাদের শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com
শেষ কথা
সবশেষে বলা যায় দেশী ফলের মধ্যে পেয়ারা সবচেয়ে বেশি পুষ্টিগুণে ভরপুর। প্রতিদিন মাত্র একটি পেয়ারা নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা সহজেই দূর করতে পারে।
পেয়ারার উপকারিতা এবং পুষ্টি গুনাগুনের কথা মাথায় রেখে প্রতিদিন একটি করে হলেও সপ্তাহে অন্তত একটি করে হলেও পেয়ারা খাওয়া প্রতিটি মানুষের উচিৎ।
আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে করুন!